ডিজিটাল মুদ্রা (ইলেক্ট্রনিক কারেন্সি) হচ্ছে সেসব মুদ্রা যা শুধু ভার্চুয়ালী লেনদেন হয়, বাস্তবে যার কোনো অস্তিত্ব নেই, বিনিময়ের বা লেনদেনের সব তথ্য গোপনীয় করে রাখা হয়ে থাকে। এ ধরণের ডিজিটাল মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সি নামেও পরিচিত। অর্থাৎ ডিজিটাল মুদ্রা একধরনের মুদ্রা, যা শুধু ডিজিটাল রূপে পাওয়া যায়, ভৌতভাবে নয় (যেমন ব্যাংক নোট বা পয়সা)। এটি ভৌত মুদ্রার অনুরূপ বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে, তবে এটি তাৎক্ষণিক লেনদেন এবং সীমান্তহীন মালিকানা হস্তান্তর এর সুযোগ করে দেয়। এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে প্রায় ৬০০০ এর উপর ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রচলিত হয়েছে। এই প্রযুক্তি মুদ্রার বিপ্লবের কারণে এবার শেষ হতে চলছে কাগজের টাকার দিন। হয়ত কয়েক দশকের মধ্যে পৃথিবী থেকে পুরোপুরি কাগজের টাকা বিদায় নিয়ে আসবে ডিজিটাল মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সি।

ডিজিটাল মুদ্রা কী?
ডিজিটাল মুদ্রা হচ্ছে সেসব মুদ্রা, যা শুধু ভার্চুয়াল জগতে লেনদেন হয়। বাস্তবে যার কোনো অস্তিত্ব নেই। বিনিময়ের সব তথ্য গোপন থাকে, বেশির ভাগ সময়েই থাকে অজ্ঞাত। এ ধরনের ডিজিটাল মুদ্রাকে বলা হয় ক্রিপ্টোকারেন্সি। ২০০৯ সালে বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে বিটকয়েনের সূচনা ঘটে। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সির অনলাইন মূল্য থাকলেও কোনো সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার নিয়ন্ত্রণ করে না। এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে প্রায় ৬০০০ এর উপর ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রচলিত হয়েছে। ল্যাটিন শব্দ ক্রিপ্টোস (kryptos) এর অর্থ হচ্ছে ‘লুকানো’, দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে কারেন্সি যা মূলত একধরনের টোকেন যার নির্দিষ্ট একটি মূল্য রয়েছে যা দিয়ে পণ্য বা সার্ভিস কেনা যায়।

ক্রিপ্টোকারেন্সি এর শাব্দিক অর্থ নিরাপদ ও লুকায়িত মুদ্রা ব্যবস্থা । ক্রিপ্টোকারেন্সি এক ধরনের সাংকেতিক বা ডিজিটাল মুদ্রা যার কোন বাস্তব রূপ নেই । এই কারেন্সি কোন সরকার বা রাষ্ট্র উৎপাদন বা জোগান দেয় না। এটি একটি কম্পিউটার এ্যলগোরিদম টেকনোলজি। ক্রিপ্টোগ্রাফিক কোডের মাধ্যমে এটিকে তৈরি করা হয়েছে। এদের মধ্যে বিটকয়েন সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিটকয়েন হলো ওপেন সোর্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটোকলের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া এক ধরনের সাঙ্কেতিক মুদ্রা। ধারণা করা হয় আগামি দিনে বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এই ডিজিটাল মুদ্রা ব্যাপক প্রভাব রাখবে। এই মুদ্রা দিয়ে লেনদেনে কোনো ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বা নিকাশ ঘর লাগে না।

বিশ্বজুড়ে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রা। আর্থিক লেনদেনে মানুষের চিন্তাধারাকে আমূল বদলে দিচ্ছে সময়োপযোগী এ উদ্ভাবন। নজর কেড়েছে বড় বিনিয়োগকারী ও করপোরেট জগতেরও। বর্তমানে বিটকয়েন, এথেরিয়াম, রিপল, লাইটকয়েনসহ হাজারো ক্রিপ্টোকারেন্সি ভার্চুয়াল দুনিয়া চষে বেড়াচ্ছে। এতে জুয়া, হুন্ডি, চোরাচালান, সাইবার চাঁদাবাজিসহ অবৈধ লেনদেন উৎসাহিত হচ্ছে, যা চিন্তায় ফেলেছে বিশ্বের নীতিনির্ধারকদের। তাই বিটকয়েনের মোকাবেলায় তাঁরা হাঁটছেন বৈধ ডিজিটাল মুদ্রার পথে।

ছবি: ইন্টারনেট

ডিজিটাল মুদ্রার সুবিধা
ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনে কোনো তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন পরে না। লেনদেনে ব্যাংকের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ এই লেনদেন সরাসরি গ্রাহক-প্রেরকের মধ্যেই হয়ে থাকে। ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে এই লেনদেন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে।
বিটকয়েনের ফলে এক মুহূর্তে যে কেউ উগান্ডা থেকে চীনে মুদ্রা পাঠিয়ে কোনো কিছু কিনতে পারবে। কোনো ব্যাংকের ব্যাপার নেই, কোনো মুদ্রা বিনিময় হারের ব্যাপার নেই। মধ্যবর্তী কোনো সংস্থা নেই।
এই মুদ্রা ত্বরিত এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে যেতে পারে। বিটকয়েনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট লাগছে। কিন্তু অন্যান্য ক্রিপ্টো মুদ্রা আরও কম সময়ে হাত বদল হতে পারে।

এই মুদ্রা একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে পাঠাতে নামমাত্র খরচ লাগে। এটি আবার পাঠানো অর্থের পরিমাণের ওপর নির্ভরশীল নয়। একটি বিটকয়েন আর এক লাখ বিটকয়েন পাঠাতে একই খরচ!
ক্রিপ্টো মুদ্রার লেনদেন জাল করা যায় না। একবার ট্রান্সফার হয়ে গেলে ওটাকে কোনোভাবে ফিরিয়ে নেওয়া বা পরিবর্তন করা যায় না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, হাজার হাজার মেশিনে এটা লিপিবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই লেনদেন অপরিবর্তনীয়।
ক্রিপ্টো মুদ্রার কোনো মুদ্রাস্ফীতি নেই। এই মুদ্রার সংখ্যা পূর্বনির্ধারিত, তাই টাকার মতো তা আরও ছাপানো যায় না। বিভিন্ন দেশ প্রকাশ্যে বা গোপনে তাদের মুদ্রা বেশি ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে, ফলে মুদ্রা যুদ্ধ শুরু হয়ে যাচ্ছে। বিটকয়েনের সর্বোচ্চ সংখ্যায় ২ দশমিক ১ কোটিতে নির্ধারিত করা আছে।

ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব বসটনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জিম চুনহা বলেন, ‘বর্তমান ডিজিটাল মুদ্রাগুলো প্রিন্ট মুদ্রায় রূপান্তর করা যায় না, কিন্তু সিবিডিসি যেকোনো মুহূর্তে প্রিন্ট মুদ্রায় রূপান্তর করা যাবে।
বিটকয়েন কীভাবে তৈরি হয়?
বিটকয়েন উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি করা হয় যাকে মাইনিং বলা হয়। যার মূল চালিকা শক্তি GPU । Graphics শব্দটির মাধ্যকে অনেকটাই বুঝা যায়, কার্রন আমরা এই শব্দটির সাথে বেশ পরিচিত। বিটকয়েন তৈরি পদ্ধতিকে বলা হয় মাইনিং আর যারা এই মাইনিং করে তাদের বলা হয় মাইনার। ২০০৮ সালের শেষভাগে জাপানি নাগরিক সাতোশি নাকামোতো নামের একজন বা একদল সফটওয়্যার বিজ্ঞানী এই ‘ক্রিপ্টোকারেন্সির’ উদ্ভাবন করেন।

ছবি: ইন্টারনেট

ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাবনা
বিশ্বের অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি এর অনুমোদন নিয়ে কাজ করছে যাতে করে এর লেনদেন তাদের তত্বাবধানে আনতে পারে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ৮০ শতাংশই এ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, জাপান অনেক দূর এগিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ এবং এমআইটি যৌথভাবে সিবিডিসি (সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি) নিয়ে গবেষণা করছে হ্যামিলটন প্রকল্পের মাধ্যমে। এ প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ডিজিটাল মুদ্রা কিভাবে কাজ করবে এবং এ ক্ষেত্রে কোন ধরণের ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন তা নিরুপণ করা। বিশ্বের ৬৫ টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক়র উপর জরিপ চালিয়ে ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটলমেন্টসং জানায়, ৮৫ শতাংশ ব্যাংকই সিবিডিসি নিয়ে কোনো না কোনোভাবে ভাবে কাজ করছে। ১৫ শতাংশ এ নিয়ে গবেষণায় পাইলট প্রকল্পে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, কেন্দ্রীয়ব্যাংকগুলি বোঝার চেষ্টা করছে সিবিডিসির মাধ্যমে জনগণ কতটা লাভবান হবে, মূল্য স্থিতিশীলতা ও লেনদেনের নিরাপত্তা ইত্যাদি কতটা নিশ্চিত করা যাবে।

ছবি: ইন্টারনেট

ডিজিটাল মুদ্রার পথে যেসব বড় দেশ
ব্যাংক অব ইতালির ডেপুটি গভর্নর পিয়ারো সিপোলনে সিএনবিসিকে বলেন, বিশ্ব ক্রমেই নগদ অর্থবিহীন লেনদেনে ধাবিত হচ্ছে। গ্রাহক-ব্যবসায়ী লেনদেন থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই এখন নগদ অর্থের ব্যবহার কমছে। ফলে সময়ের চাহিদা বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সিবিডিসি নিয়ে কাজ করছে। সিবিডিসি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, রাশিয়া, ভারতসহ অনেক দেশেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। চীন গত বছর বড় শহরগুলোতে স্থানীয় মুদ্রা ইউয়ানের ডিজিটাল সংস্করণ ডিসিইপি (ডিজিটাল কারেন্সি ইলেকট্রনিক পেমেন্ট) চালু করেছে। পরীক্ষামুলক এ প্রকল্প ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। ডিজিটাল এ মুদ্রার নাম দেয়া হয়েছে ‘ই-সিএনওয়াই’। করোনায় নগদ লেনদেন কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটেনও নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা আনার পথে হাঁটছে। যার সম্ভাব্য নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্রিটকয়েন’।

সম্প্রতি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সিবিডিসি নিয়ে কাজ করতে একটি টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও আগামী চার বছরের মধ্যে ডিজিটাল মুদ্রা আনার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। এ নিয়ে কাজ করছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও। ভারতে এক গবেষণায় বলা হয়, সিবিডিসি দেশের জিডিপিতে ২-৩ শতাংশ যোগ করবে। এমনকি যদি জিডিপিতে ১ শতাংশও যোগ হয় তা বছরে ২৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে যাবে।

বিশ্বের আর্থিক নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খুব সর্তকতার সঙ্গে এগোচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশের সরকার ইতোমধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সিকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বৈধতা দিয়েছে। আবার অনেকে দেশ এর বিপরীত কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেজারেল রিজার্ভ মনে করছে ডিজিটাল মুদ্রা প্রচলের জন্য তারা নিজেরাই একটি ব্যবস্থা চালু করবে। যার নাম দেওয়া হয়েছে কিপ্টো বুম। এর মধ্যে দিয়ে ডিজিটাল মুদ্রার নিয়ন্ত্রণ তারাই রাখার চেষ্টা করছে। তবে বলা যায় না এ কৌশলে যুক্তরাষ্ট্র সফল হবে কিনা।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোমে পাওয়েল ডিজিটাল ডলার তৈরির বিষয়ে বলেন, ‘বিষয়টির সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন করছে ফেড। আমরা মনে করি বিষয়টি আগে বোঝা আমাদের দায়িত্ব। এটি কিভাবে কাজ করবে এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলো কেমন হবে ইত্যাদি।’

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেছেন, একটি ডিজিটাল মুদ্রা তৈরি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে। সিডলের ফিনটেক এবং ব্লকচেইন গ্রুপের প্রধান লিলা টেসলার বলেন, বর্তমান যে প্রবণতা তাতে বোঝা যাচ্ছে সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে ডিজিটাল মুদ্রা গ্রহণ করবে। তবে এ ব্যবস্থাটি কেমন হবে, তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। প্রিন্ট মুদ্রারই ডিজিটাল ভার্সন হবে সিবিডিসি।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের মোট ৬৯টি দেশে সরকারি স্বীকৃতি নিয়ে চলছে এই মুদ্রার লেনদেন। প্রতিবেশী ভারতও আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নিয়েছে এই মুদ্রার লেনদেনকে। তবে বাংলাদেশ ২০১৪ সালে অবৈধ ঘোষণা করে বিটকয়েন লেনদেনকে। বিটকয়েন নিষিদ্ধ, এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে আলজেরিয়া, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, মরক্কো, নেপাল ও মেসিডোনিয়া।

ছবি: ইন্টারনেট

ডিজিটাল মুদ্রায় বাংলাদেশের ভাবনা
বর্তমান বিশ্বে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার বাজার দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রচলনের প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্বের কোনো আইনগত কর্তৃপক্ষ এই মুদ্রাকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু বর্তমানে কয়েকটি দেশের (যেমন: জাপান, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) কেন্দ্রীয় ব্যাংক/মুদ্রা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনকে বৈধতা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো এ ধরনের প্রাইভেট কারেন্সিতে লেনদেন বা সংরক্ষণের অনুমোদন দেয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলছেন, বাংলাদেশে বিটকয়েনের কোন অনুমোদন নেই। যেহেতু অনুমোদন নেই, সুতরাং এই জাতীয় লেনদেন বৈধ নয়। ২০ জুন ২০২১ সালে রাজধানী ঢাকার দারুস সালাম এলাকা থেকে বিটকয়েন ক্রয়-বিক্রয় চক্রের অন্যতম হোতা হামিমসহ চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, চক্রের সদস্যরা ভার্চ্যুয়াল জগতে বা ইন্টারনেটে অ্যাকাউন্ট করে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করেন। তাঁরা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে বাংলাদেশি বেশ কিছু অসাধু ডোমেইন হোল্ডার চক্রের সঙ্গে অর্থ লেনদেন করেন। তাঁরা ভার্চ্যুয়াল জগতে অবৈধ ডার্ক পর্নো সাইট থেকে পর্নোগ্রাফি ক্রয় করেন।পর্নোগ্রাফিগুলো অর্থের বিনিময়ে ছড়িয়ে দেন। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা অত্যন্ত লাভজনক বলে প্রচারণা চালান।

২০২১ সালের ২৯ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রার মালিকানা, সংরক্ষণ বা লেনদেন অবৈধ। তাই আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকি এড়াতে বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেন বা সহায়তা প্রদান ও এর প্রচার থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করা হচ্ছে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, বিটকয়েনে লোকসানের কোনো রেকর্ড থাকে না। এটি নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা চলছে। জি-২০ এর সম্মেলনেও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এই মুদ্রা ব্যবহার করে বিদেশে যে অর্থপাচার করা হচ্ছে তার বেশিরভাগই কালো টাকা। দেশের অন্তত শতাধিক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এর সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের একটি তালিকা নিয়ে কাজ করছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সিকে অনুমোদন দেওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিময় দুজনের মধ্যে হয়। নজরদারির কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মতো দেশে এটিকে অনুমোদন দেওয়া হলে অর্থ পাচারকারীরা সুযোগ নিতে পারেন।
আহসান এইচ মনসুর, প্রধান নির্বাহী, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই)।
বাংলাদেশে কবে চালু হতে পারে ডিজিটাল মুদ্রা
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলছেন, ‘ক্রিপ্টোকারেন্সির’ ভেতরে বেশ জটিল কিছু বিষয় রয়েছে। যেমন এটার ব্যবসা এখন যেভাবে হচ্ছে, কেউ কিনে রেখে দিচ্ছেন, দাম বাড়লে আবার বিক্রি করছেন। কিন্তু আমাদের দেশে পুঁজিবাজারে যেমনটা হয়েছে, ভালোভাবে না বোঝার কারণে এখানেও কিন্তু প্রতারণার একটা সুযোগ রয়েছে। বিটকয়েন বাংলাদেশে ব্যবহার করতে হলে আরও অনেক পরিবর্তন প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

ছবি: ইন্টারনেট

রেমিট্যান্স পাঠাতে বিটকয়েন ব্যবহার করলে কোন ফি বা চার্জ দিতে হবে না, হলেও সেটির পরিমাণ খুব কম।
আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হবে ডিজিটাল মুদ্রা
সিলিকন ভ্যালি ভিত্তিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম Andreessen Horowitz-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মারক এন্ড্রেসসেন ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত “Why Bitcoin Matters” শিরোনামে এক উপ-সম্পাদকীয়তে বিটকয়েনের ভবিষ্যত তুলে ধরে বলেন, বিটকয়েনভিত্তিক উদ্ভাবনের একটি অবশ্যম্ভাবী এবং বিশাল ক্ষেত্র হচ্ছে আন্তর্জাতিক রেমিটেন্স। প্রতিদিন অল্প আয়ের শত শত মিলিয়ন মানুষ টাকা উপার্জনের জন্য কঠিন কাজে অন্য দেশে যায় এবং পরবর্তীতে সেই টাকা নিজ দেশে বসবাসরত পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয়। বিশ্বব্যাংকের মতে, এই মানুষগুলো প্রতিবছর ৪০০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। প্রতিদিনের ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠানো টাকার ১০ শতাংশের মতো কখনো ভয়ঙ্কর রকমের বেশি একটা ফি কেটে রাখে। রেমিট্যান্স পাঠাতে বিটকয়েন ব্যবহার করলে কোন ফি বা চার্জ দিতে হবে না, হলেও সেটির পরিমাণ খুব কম। তাছাড়া, বিটকয়েন বিশ্বের বড় একটি সংখ্যার জনগোষ্ঠীকে একটি আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অধীনে আনার জন্য স্বাভাবিকভাবেই একটি বড় শক্তি হতে পারে।

তথ্যসূত্র:
ফোর্বস ম্যাগাজিন
এএফপি
বিবিসি
ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকার ডটকম